Audience Targeting, Retargeting

Audience Targeting Retargeting

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের দুনিয়ায়, “Audience Targeting” ও “Retargeting” শব্দদুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো এমন দুটি কৌশল যা ব্যবসাগুলিকে নির্দিষ্ট গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে এবং আগ্রহী দর্শকদেরকে আবারও টার্গেট করে রূপান্তরের হার বাড়াতে সাহায্য করে। আগে যেখানে পণ্যের বিজ্ঞাপন দেওয়া হতো একটি নির্দিষ্ট সময় বা জায়গায়, এখন তার পরিবর্তে বিজ্ঞাপন পৌঁছে যাচ্ছে নির্দিষ্ট মানুষের হাতে—যারা ইতোমধ্যেই সে পণ্যে আগ্রহ দেখিয়েছে বা দেখাতে পারে। এই প্রবন্ধে আমরা Audience Targeting ও Retargeting এর খুঁটিনাটি দিকগুলো বিশদভাবে আলোচনা করবো।

Audience Targeting কী?

Audience Targeting হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট শ্রোতা বা গ্রাহকগোষ্ঠীকে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে লক্ষ্য করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হলো এমন মানুষদের সামনে বিজ্ঞাপন তুলে ধরা যারা সেই পণ্য বা পরিষেবায় আগ্রহী হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। এটা মার্কেটারের জন্য সময়, অর্থ এবং প্রচেষ্টার অপচয় কমিয়ে দেয় এবং ব্যবসার ROI (Return on Investment) অনেকাংশে বাড়িয়ে তোলে।

Audience Targeting সাধারণত নিচের ভিত্তিতে করা হয়:

  • Demographics (বয়স, লিঙ্গ, পেশা, শিক্ষা)
  • Location (ভৌগোলিক অবস্থান)
  • Interests and Behaviors (অভ্যাস, আগ্রহ, কেনাকাটার ধরণ)
  • Device Usage (মোবাইল, ডেস্কটপ, ট্যাবলেট)
  • Custom Audiences (ইমেইল লিস্ট, ওয়েবসাইট ভিজিটর)

একজন সফল মার্কেটার নিজের প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের টার্গেট গ্রুপের রূপরেখা তৈরির মাধ্যমে প্রথমেই এই Audience Targeting-এর প্ল্যান তৈরি করেন। এই শ্রোতাদের মনস্তত্ত্ব, জীবনধারা, এবং ডিজিটাল আচরণ বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞাপন ডিজাইন করা হয়।

Audience Targeting এর প্রকারভেদ

Audience Targeting বিভিন্নভাবে শ্রেণিবিন্যাস করা যায়। কিছু প্রধান ধরন নিচে ব্যাখ্যা করা হলো:

১. Contextual Targeting

এটি নির্দিষ্ট কীওয়ার্ড বা ওয়েবসাইট কনটেন্টের উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞাপন দেখানোর কৌশল। উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ ফিটনেস বিষয়ক ব্লগ পড়ছে, সেখানে হেলথ সাপ্লিমেন্ট বা জিম মেম্বারশিপের বিজ্ঞাপন দেখানো হতে পারে।

২. Behavioral Targeting

এই টার্গেটিং ব্যবহারকারীর ব্রাউজিং হিস্টোরি, ক্লিক হ্যাবিট, এবং পছন্দের ভিত্তিতে বিজ্ঞাপন দেখায়। এটি অনেক বেশি পারসোনালাইজড ও প্রাসঙ্গিক হয়।

৩. Geo-targeting

যে ব্যবহারকারীর অবস্থান কোন শহর বা অঞ্চল, তার উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞাপন দেখানো হয়। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকার একজন ব্যবহারকারীকে “ঢাকায় হোম ডেলিভারি সহ” বিজ্ঞাপন দেখানো যেতে পারে।

৪. Demographic Targeting

এটি বয়স, লিঙ্গ, ধর্ম, শিক্ষা, পেশা ইত্যাদির ভিত্তিতে নির্ধারিত শ্রোতাদের জন্য প্রযোজ্য। যেমন, একজন ২৫-৩৫ বছরের মহিলা যিনি ফ্যাশনে আগ্রহী, তাকে নারীদের পোশাকের বিজ্ঞাপন দেখানো যেতে পারে।

Retargeting কী এবং এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ?

Retargeting (বা Remarketing) হচ্ছে এমন একটি ডিজিটাল মার্কেটিং কৌশল, যার মাধ্যমে আগেই যেসব ব্যবহারকারী কোনোভাবে আপনার ওয়েবসাইট, অ্যাপ, বা সোশ্যাল মিডিয়ায় এসেছিলেন কিন্তু ক্রয় করেননি—তাদের পুনরায় টার্গেট করা হয়।

এই পদ্ধতিতে তাদের সামনে পুনরায় বিজ্ঞাপন দেখানো হয়, যেন তারা আগ্রহী হয়ে আবার আসে এবং এইবার ক্রয় সম্পন্ন করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, একজন প্রথমবার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা ব্যবহারকারীর মাত্র ২% অর্ডার করে। বাকি ৯৮% চলে যায় এবং হারিয়ে যায়, যদি না আপনি Retargeting করেন।

Retargeting কিভাবে কাজ করে?

Retargeting মূলত দুইভাবে কাজ করে:

১. Pixel-based Retargeting

এটি সবচেয়ে সাধারণ এবং কার্যকর পদ্ধতি। আপনার ওয়েবসাইটে একটি ছোট JavaScript কোড বা পিক্সেল যুক্ত থাকে যা প্রত্যেক ভিজিটরকে ট্র্যাক করে। যখন কেউ আপনার ওয়েবসাইট ব্রাউজ করে, তখন তাদের ব্রাউজারে একটি কুকি জমা হয়। এরপর তারা যখন অন্য কোনো ওয়েবসাইট বা সোশ্যাল মিডিয়ায় যায়, তখন সেই কুকি ব্যবহার করে তাকে আপনার বিজ্ঞাপন দেখানো হয়।

২. List-based Retargeting

এই পদ্ধতিতে আপনার পূর্বের গ্রাহকদের ইমেইল বা ফোন নম্বর তালিকা ব্যবহার করা হয়। আপনি এই তালিকাটি Facebook বা Google Ads-এ আপলোড করে সেই গ্রাহকদের নতুন অফার বা ক্যাম্পেইন দেখাতে পারেন।

Audience Targeting ও Retargeting-এর মধ্যে পার্থক্য

বিষয়Audience TargetingRetargeting
লক্ষ্যনতুন সম্ভাব্য গ্রাহকআগের ভিজিটর
উদ্দেশ্যপ্রথমবার পরিচয় করানোআগ্রহ তৈরি ও রূপান্তর
তথ্য ভিত্তিডেমোগ্রাফিক, ইন্টারেস্টকুকি, ভিজিট হিস্টোরি, ইমেইল
পদ্ধতিফেসবুক/গুগল বিজ্ঞাপনPixel বা ইমেইল রিমার্কেটিং

Audience Targeting হচ্ছে সম্ভাব্য নতুন গ্রাহক খোঁজা, আর Retargeting হচ্ছে পুরাতন বা আগ্রহী গ্রাহকদের ফিরে পাওয়া।

Audience Targeting ও Retargeting-এর কার্যকারিতা

সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে এই দুটি কৌশল একসঙ্গে একটি ব্যবসার জন্য বিশাল সুফল আনতে পারে:

  • রূপান্তর হার বাড়ায়
  • ব্র্যান্ড রিকল ও রিকগনিশন উন্নত করে
  • বাজেটের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে
  • গ্রাহকের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে

একটি সফল ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিতে Audience Targeting ও Retargeting উভয়কেই সংযুক্ত রাখা উচিত।

কোন কোন প্ল্যাটফর্মে Audience Targeting ও Retargeting করা যায়?

বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম Audience Targeting ও Retargeting-এর সুযোগ দেয়। যেমন:

  • Facebook Ads Manager: Custom Audience, Lookalike Audience, Pixel Retargeting
  • Google Ads: Demographic, In-market, Similar Audiences
  • Instagram: Facebook-এর মাধ্যমে
  • YouTube Ads: Watch History ও Custom Affinity Audiences
  • LinkedIn Ads: Job Titles, Industries, Company Size
  • Email Retargeting Tools: Mailchimp, Klaviyo

Audience Targeting ও Retargeting কৌশল কাদের জন্য উপযোগী?

এই কৌশলগুলো সব ধরনের অনলাইন ব্যবসার জন্য উপযোগী হলেও বিশেষভাবে উপকার পায় নিচের সেক্টরগুলো:

  • ই-কমার্স ব্যবসা
  • অনলাইন কোর্স বিক্রেতা
  • সার্ভিস বেইসড কোম্পানি (যেমন ডিজাইন, কনসাল্টিং)
  • লোকাল বিজনেস যারা অনলাইন অর্ডার নেয়
  • রিয়েল এস্টেট, ফ্যাশন, ফুড ডেলিভারি ব্র্যান্ড

কিছু বাস্তব উদাহরণ

১. Daraz: তারা ব্যবহারকারীদের ভিজিট হিস্টোরি অনুযায়ী রিমার্কেটিং করে থাকে। আপনি যদি কোনো সময় জুতা ব্রাউজ করেন, পরবর্তী সময়ে আপনি Facebook-এ সেই জুতার বিজ্ঞাপন পেতে পারেন।

২. Pathao: Pathao অ্যাপ আনইনস্টল করলে কিছুদিন পরে তারা আপনাকে SMS বা Email দেয়, যা রিমার্কেটিং কৌশলের এক রূপ।

সফলতার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস

  • Audience segmentation করুন সঠিকভাবে
  • উপযুক্ত বিজ্ঞাপন কপি ও ভিজ্যুয়াল তৈরি করুন
  • Frequency কন্ট্রোল করুন যাতে ব্যবহারকারী বিরক্ত না হয়
  • Conversion tracking সেট করুন
  • A/B Testing চালান এবং পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করুন
Scroll to Top