বর্তমান ডিজিটাল যুগে ই-কমার্স ব্যবসা জনপ্রিয়তার শীর্ষে। আপনি যদি নিজস্ব একটি অনলাইন দোকান তৈরি করতে চান তবে WordPress ও WooCommerce হতে পারে আপনার সেরা সঙ্গী। এই দুইটি টুল ব্যবহারে আপনি খুব সহজে একটি পেশাদার ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন, যার মাধ্যমে পণ্য বিক্রি, পেমেন্ট গ্রহণ, এবং অর্ডার ম্যানেজমেন্টসহ যাবতীয় কাজ পরিচালনা করা সম্ভব। এই প্রবন্ধে আমরা ধাপে ধাপে শেখাবো কিভাবে আপনি WordPress ইনস্টল করবেন এবং WooCommerce যুক্ত করে একটি পূর্ণাঙ্গ ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করবেন।
১. ওয়ার্ডপ্রেস কী?
WordPress একটি ওপেন সোর্স কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (CMS), যা দিয়ে খুব সহজে ওয়েবসাইট তৈরি ও পরিচালনা করা যায়। এটি PHP ও MySQL ব্যবহার করে কাজ করে এবং হাজারো থিম ও প্লাগইনের মাধ্যমে কাস্টমাইজ করা যায়।
২. WooCommerce কী?
WooCommerce একটি শক্তিশালী ও জনপ্রিয় WordPress প্লাগইন যা WordPress ভিত্তিক ওয়েবসাইটকে একটি পূর্ণাঙ্গ ই-কমার্স সাইটে রূপান্তর করে। এটি ব্যবহার করে আপনি খুব সহজে অনলাইন পণ্য বিক্রি, পেমেন্ট গ্রহণ, শিপিং পরিচালনা এবং গ্রাহক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট করতে পারেন। এর ব্যবহারযোগ্যতা ও কাস্টমাইজেশন ক্ষমতার জন্য এটি বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ ব্যবসার প্রথম পছন্দ হয়ে উঠেছে।
পণ্য আপলোড করতে পারবেন:
WooCommerce-এর সবচেয়ে মৌলিক ও প্রয়োজনীয় ফিচার হলো পণ্য আপলোড করার সুবিধা। আপনি খুব সহজেই একটি পণ্যের নাম, বিস্তারিত বিবরণ, মূল্য, SKU (Stock Keeping Unit), ক্যাটাগরি, ট্যাগ, ফিচার ইমেজ এবং একাধিক গ্যালারি ইমেজ যুক্ত করতে পারবেন। পাশাপাশি আপনি চাইলে Variable Products (যেমন—রঙ বা সাইজ ভেদে ভিন্ন প্রাইস) তৈরি করতে পারবেন। এতে করে ক্রেতারা পণ্যের বিভিন্ন অপশন দেখে সহজে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
ভিন্ন ভিন্ন পেমেন্ট গেটওয়ে যুক্ত করতে পারবেন:
একটি অনলাইন দোকানের জন্য পেমেন্ট অপশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। WooCommerce আপনাকে বিভিন্ন ধরনের পেমেন্ট গেটওয়ে যুক্ত করার সুযোগ দেয়। এর মধ্যে ডিফল্টভাবে রয়েছে PayPal, Stripe, Direct Bank Transfer এবং Cash on Delivery। আপনি যদি বাংলাদেশি ব্যবসা চালাতে চান, তাহলে bKash, Nagad, Rocket বা SSLCommerz-এর মতো স্থানীয় গেটওয়ে প্লাগইন যুক্ত করেও লেনদেন চালাতে পারবেন। প্রতিটি পেমেন্ট গেটওয়ে ইনস্টল ও কনফিগার করাও খুব সহজ।
স্টক ম্যানেজমেন্ট করতে পারবেন:
আপনার ই-কমার্স সাইটে পণ্যের পরিমাণ ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে WooCommerce অত্যন্ত সহায়ক। প্রতিটি পণ্যের জন্য স্টক পরিমাণ নির্ধারণ করে দেওয়া যায় এবং অটো-স্টক রিডাকশন সিস্টেম চালু করা যায়। স্টক শেষ হয়ে গেলে আপনি চাইলে গ্রাহককে ‘Out of Stock’ বার্তা দেখাতে পারেন অথবা ‘Backorder’ এর মাধ্যমে আগাম অর্ডার গ্রহণ করতে পারেন। এমনকি WooCommerce আপনাকে স্টক শেষ হওয়ার পূর্বে ইমেইল করে সতর্কতাও পাঠায়।
শিপিং অপশন কনফিগার করতে পারবেন:
শিপিং সিস্টেম কাস্টমাইজ করার জন্য WooCommerce অনেক সুবিধা দেয়। আপনি অঞ্চলভিত্তিক বা দেশভিত্তিক শিপিং জোন তৈরি করতে পারেন এবং প্রতিটির জন্য আলাদা শিপিং রেট নির্ধারণ করতে পারেন। যেমন, ঢাকার জন্য ফ্ল্যাট রেট, ঢাকার বাইরের জন্য ওজনভিত্তিক রেট। এছাড়া Local Pickup অপশনও সক্রিয় করা যায়, যেখানে ক্রেতা সরাসরি এসে পণ্য সংগ্রহ করতে পারেন। শিপিং ক্লাসের মাধ্যমে আপনি একই ধরণের পণ্যের জন্য একসাথে শিপিং নিয়মও তৈরি করতে পারবেন।
কুপন, ডিসকাউন্ট ও রিপোর্টিং এর সুবিধা পাবেন:
গ্রাহকদের আকর্ষণ করতে WooCommerce কুপন কোড ও ডিসকাউন্ট ফিচার অফার করে। আপনি চাইলে নির্দিষ্ট পণ্যের উপর বা পুরো অর্ডারের উপর ছাড় দিতে পারেন। কুপন কোডের সীমাবদ্ধতা, সময়সীমা এবং ব্যবহারের সংখ্যা নির্ধারণ করা যায়। এছাড়াও WooCommerce বিশদ রিপোর্টিং সিস্টেম সরবরাহ করে, যেখানে আপনি দেখতে পারবেন আপনার মোট বিক্রি, পণ্যের পারফরম্যান্স, শীর্ষ বিক্রিত পণ্য, রিফান্ড রেট, এবং কোন গ্রাহক সবচেয়ে বেশি অর্ডার করছে তা। এই তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে আপনি ভবিষ্যতের জন্য উন্নত ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
৩. প্রাথমিক প্রস্তুতি
ডোমেইন ও হোস্টিং কেনা
WordPress ওয়েবসাইট তৈরি করতে হলে প্রথমেই আপনাকে একটি নির্ভরযোগ্য ডোমেইন এবং ওয়েব হোস্টিং সার্ভিস কিনতে হবে। ডোমেইন হলো আপনার ওয়েবসাইটের ঠিকানা, যেমন: example.com, এবং হোস্টিং হলো যেখানে আপনার ওয়েবসাইটের ফাইল ও ডেটা সংরক্ষিত থাকে। বাজারে অনেক ভালো মানের হোস্টিং প্রোভাইডার রয়েছে, যাদের মধ্যে Hostinger, Bluehost, Namecheap এবং SiteGround অত্যন্ত জনপ্রিয়। এই কোম্পানিগুলো বিভিন্ন রকমের হোস্টিং প্যাকেজ অফার করে থাকে, যেমন: Shared Hosting, VPS, Cloud Hosting ইত্যাদি। তবে WordPress সাইট তৈরি করতে চাইলে অবশ্যই “WordPress-Supported Hosting” বা “Managed WordPress Hosting” বেছে নেওয়াই শ্রেয়। এতে WordPress ইনস্টলেশন, আপডেট এবং সিকিউরিটি সংক্রান্ত অনেক বিষয় সহজ হয়ে যায়।
SSL সার্টিফিকেট নিশ্চিত করুন
যেহেতু ই-কমার্স সাইটে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য ও পেমেন্ট তথ্য ব্যবহৃত হয়, তাই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা অত্যন্ত জরুরি। SSL (Secure Sockets Layer) সার্টিফিকেট একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা প্রোটোকল যা আপনার ওয়েবসাইট এবং ব্যবহারকারীর ব্রাউজারের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানে এনক্রিপশন নিশ্চিত করে। একটি SSL সার্টিফিকেট যুক্ত থাকলে আপনার ওয়েবসাইটের URL “http” এর পরিবর্তে “https” দিয়ে শুরু হবে এবং ব্রাউজারে একটি তালা চিহ্ন দেখা যাবে, যা গ্রাহকের কাছে আপনার সাইটের প্রতি আস্থা তৈরি করে। অনেক হোস্টিং প্রোভাইডার এখন ফ্রি SSL সার্টিফিকেট অফার করে, তাই হোস্টিং কেনার সময় এই সুবিধাটি থাকছে কিনা তা ভালোভাবে যাচাই করা জরুরি।
৪. ওয়ার্ডপ্রেস ইনস্টলেশন ধাপসমূহ
ধাপ ১: হোস্টিং কন্ট্রোল প্যানেল (cPanel) এ লগইন করুন
WordPress ইনস্টল করার জন্য প্রথমে আপনার হোস্টিং প্রোভাইডার থেকে প্রাপ্ত কন্ট্রোল প্যানেল বা cPanel অ্যাক্সেস করতে হবে। হোস্টিং কেনার পর আপনাকে ইমেইলের মাধ্যমে একটি ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়, যেটি ব্যবহার করে আপনি cPanel-এ লগইন করতে পারবেন। এটি হলো আপনার সার্ভারের অ্যাডমিন প্যানেল, যেখান থেকে আপনি আপনার ওয়েবসাইটের সকল ফাইল, ডেটাবেস এবং সফটওয়্যার ম্যানেজ করতে পারবেন। এই ধাপে লগইন করার মাধ্যমে আপনি পরবর্তী ধাপগুলো সম্পাদনের জন্য প্রস্তুত হবেন।
ধাপ ২: Softaculous App Installer ব্যবহার করে ইনস্টল করুন
WordPress ইনস্টলেশনের সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো Softaculous App Installer ব্যবহার করা। এটি সাধারণত cPanel-এর একটি অংশ হিসেবে আগে থেকেই ইনস্টল করা থাকে। প্রথমে cPanel থেকে Softaculous Apps Installer সেকশনে প্রবেশ করুন। সেখানে আপনি WordPress-এর একটি আইকন দেখতে পাবেন। এই আইকনে ক্লিক করার পর একটি নতুন পেইজ খুলবে যেখানে “Install Now” নামে একটি বোতাম থাকবে। এই বোতামে ক্লিক করুন।
এরপর আপনাকে কিছু সেটিংস পূরণ করতে হবে। যেমন, আপনি কোন ডোমেইনে WordPress ইনস্টল করতে চান, অ্যাডমিন ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড কী হবে, অ্যাডমিন ইমেইল ঠিকানা, সাইটের নাম ও সাইটের বিবরণ কী হবে ইত্যাদি। এই তথ্যগুলো সঠিকভাবে পূরণ করার পর নিচে “Install” নামে একটি বোতাম দেখতে পাবেন। সেটিতে ক্লিক করলেই ইনস্টলেশন প্রক্রিয়া শুরু হবে।
মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই WordPress স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইনস্টল হয়ে যাবে এবং আপনার নির্ধারিত ডোমেইনে একটি ফ্রেশ WordPress ওয়েবসাইট চালু হয়ে যাবে। ইনস্টলেশন সফল হলে আপনাকে অ্যাডমিন লগইন প্যানেল (যেমন: yourdomain.com/wp-admin) এর একটি লিঙ্ক দেওয়া হবে, যেখান থেকে আপনি ওয়েবসাইট ম্যানেজ করতে পারবেন।
৫. ওয়ার্ডপ্রেস কনফিগারেশন
লগইন করুন: yourdomain.com/wp-admin
WordPress সফলভাবে ইনস্টল হওয়ার পর আপনাকে ওয়েবসাইটের অ্যাডমিন প্যানেলে প্রবেশ করতে হবে। এটির ঠিকানা সাধারণত হয়: yourdomain.com/wp-admin। এই পেজে গিয়ে ইনস্টলেশনের সময় নির্ধারিত ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে লগইন করতে হবে। একবার লগইন করলে আপনি WordPress Dashboard-এ প্রবেশ করতে পারবেন, যেখান থেকে সাইটের ডিজাইন, কনটেন্ট এবং ফিচার নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
লগইন করার পর থিম সিলেক্ট করুন অথবা নতুন থিম আপলোড করুন
ড্যাশবোর্ডে প্রবেশ করার পর সবার আগে আপনার ওয়েবসাইটের জন্য একটি সুন্দর ও ইউজার-ফ্রেন্ডলি থিম নির্বাচন করা জরুরি। থিম নির্বাচন করতে Dashboard > Appearance > Themes-এ যান এবং “Add New” বাটনে ক্লিক করে WordPress এর ডিরেক্টরি থেকে ফ্রি থিম ব্রাউজ করতে পারেন। পছন্দসই থিম ইনস্টল করে “Activate” করলে সেটি আপনার সাইটে কার্যকর হবে। আপনি চাইলে কোনো থার্ড-পার্টি থিম (যেমন: Themeforest থেকে কেনা প্রিমিয়াম থিম) .zip ফাইল আকারে আপলোড করেও ইনস্টল করতে পারেন।
প্রয়োজনীয় প্লাগইন ইনস্টল করুন (Contact Form, SEO, Cache ইত্যাদি)
থিম সেটআপের পর পরবর্তী ধাপে প্রয়োজনীয় প্লাগইনসমূহ ইনস্টল করতে হবে, যা আপনার ওয়েবসাইটে অতিরিক্ত কার্যক্ষমতা যোগ করবে। প্লাগইন যুক্ত করতে Dashboard > Plugins > Add New এ যান। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাথমিক প্লাগইনের মধ্যে রয়েছে:
- Contact Form 7 বা WPForms – ওয়েবসাইটে কন্টাক্ট ফর্ম তৈরির জন্য।
- Yoast SEO বা Rank Math – SEO অপ্টিমাইজেশনের জন্য।
- LiteSpeed Cache বা WP Super Cache – ওয়েবসাইট স্পিড বাড়াতে।
- Elementor – পেজ বিল্ডারের জন্য, যাতে সহজে পেজ ডিজাইন করা যায়।
প্রতিটি প্লাগইন ইনস্টল করার পর “Activate” করতে ভুলবেন না, তাহলে প্লাগইনটি কার্যকর হবে। পাশাপাশি প্লাগইন ব্যবহারে সাইট ভারী হয়ে না যায় সেজন্য প্রয়োজন ছাড়া অতিরিক্ত প্লাগইন ইনস্টল না করাই ভালো।
৬. WooCommerce ইনস্টলেশন ধাপসমূহ
ধাপ ১: WooCommerce প্লাগইন ইনস্টল করুন
WooCommerce ইনস্টল করার প্রক্রিয়া খুবই সহজ এবং এটি WordPress Dashboard থেকেই করা যায়। প্রথমে ড্যাশবোর্ডে লগইন করে বাম পাশের মেনু থেকে Plugins > Add New অপশনে ক্লিক করতে হবে। এরপর সার্চ বক্সে “WooCommerce” লিখে সার্চ দিলে WordPress.org ডিরেক্টরি থেকে অফিসিয়াল WooCommerce প্লাগইন চলে আসবে। এখান থেকে “Install Now” বোতামে ক্লিক করে কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করতে হবে। ইনস্টলেশন সম্পন্ন হলে “Activate” বাটনে ক্লিক করে প্লাগইনটি সক্রিয় করতে হবে। WooCommerce একবার অ্যাক্টিভ হয়ে গেলে এটি আপনার WordPress সাইটে একটি নতুন ই-কমার্স ফিচার যুক্ত করে।
ধাপ ২: WooCommerce Setup Wizard অনুসরণ করুন
WooCommerce অ্যাক্টিভ করার পরপরই একটি অটোমেটিক সেটআপ উইজার্ড চালু হবে যা আপনাকে ধাপে ধাপে প্রয়োজনীয় সেটিংস সম্পন্ন করতে সাহায্য করবে।
Store details:
এই ধাপে আপনাকে আপনার দোকানের প্রাথমিক তথ্য দিতে হবে, যেমন দেশ, ঠিকানা, শহর, জিপ কোড এবং আপনি কোন মুদ্রায় লেনদেন করবেন তা নির্ধারণ করতে হবে। এই তথ্যগুলো সঠিকভাবে দিলে শিপিং এবং ট্যাক্স ক্যালকুলেশনে সুবিধা হবে।
Industry:
এরপর আপনাকে নির্বাচন করতে হবে আপনার অনলাইন ব্যবসা কোন ইন্ডাস্ট্রির অন্তর্ভুক্ত। উদাহরণস্বরূপ—ফ্যাশন, ইলেকট্রনিক্স, হ্যান্ডমেড, ফুড, হেলথ ইত্যাদি। এটি WooCommerce-কে বুঝতে সাহায্য করে আপনার জন্য প্রাসঙ্গিক অপশনগুলো সাজিয়ে দিতে।
Product Types:
এই ধাপে আপনি কোন ধরণের পণ্য বিক্রি করবেন তা নির্ধারণ করতে হবে। সাধারণত এখানে তিনটি প্রধান অপশন থাকে—Simple products (একটি নির্দিষ্ট প্রকারের পণ্য), Downloadable products (ডিজিটাল ফাইল বা সফটওয়্যার), এবং Variable products (একই পণ্যের বিভিন্ন রঙ বা সাইজের ধরন)। আপনি আপনার ব্যবসার প্রয়োজন অনুযায়ী একটি বা একাধিক টাইপ নির্বাচন করতে পারেন।
Business Details:
এই অংশে WooCommerce জানতে চায় আপনি নতুন ব্যবসায়ী কিনা, আপনার ই-কমার্সে মোট কতটি পণ্য থাকবে, আপনি অন্য কোনো প্ল্যাটফর্ম থেকে মাইগ্রেট করছেন কি না ইত্যাদি। এর মাধ্যমে WooCommerce আপনার সাইটের জন্য আরও উপযুক্ত রিকমেন্ডেশন দিতে পারে।
Theme Setup:
সেটআপ উইজার্ডের শেষ ধাপে আপনাকে WooCommerce রিকমেন্ড করা কিছু ফ্রি এবং প্রিমিয়াম থিম দেখানো হবে। আপনি চাইলে সেখান থেকে একটি থিম ইনস্টল করতে পারেন অথবা বর্তমানে ব্যবহৃত থিম চালিয়ে যেতে পারেন। থিম WooCommerce কম্প্যাটিবল হওয়া ভালো, যাতে পণ্যের পেজ, কার্ট, চেকআউট পেইজ সুন্দরভাবে প্রদর্শিত হয়।
৭. পণ্য অ্যাড করা
WooCommerce > Products > Add New
আপনার WooCommerce ওয়েবসাইটে পণ্য বিক্রি শুরু করতে হলে প্রথম কাজ হলো পণ্য অ্যাড করা। এটি করার জন্য WordPress ড্যাশবোর্ডে গিয়ে WooCommerce মেনুর অধীনে Products > Add New অপশনে ক্লিক করতে হবে। এখানে একটি নতুন পণ্য অ্যাড করার জন্য একটি পূর্ণ ফর্ম প্রদর্শিত হবে, যেখানে প্রতিটি ফিল্ডে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করতে হবে।
পণ্যের নাম দিন
সবার প্রথমে পণ্যের একটি পরিষ্কার ও বর্ণনামূলক নাম দিতে হবে। এই নামটি গ্রাহকরা সার্চ করলে দেখতে পাবে এবং এটি SEO-এর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। চেষ্টা করুন এমন নাম দিতে যা পণ্যের ধরন ও বৈশিষ্ট্য সংক্ষিপ্তভাবে প্রকাশ করে।
পণ্যের বিস্তারিত বর্ণনা দিন
নিচে একটি বড় টেক্সট এরিয়া থাকবে যেখানে আপনি পণ্যের পূর্ণ বর্ণনা দিতে পারবেন। এখানে পণ্যের কার্যকারিতা, উপাদান, ব্যবহারের পদ্ধতি বা যেকোনো প্রাসঙ্গিক তথ্য উল্লেখ করুন। এই অংশটি গ্রাহকদের বুঝিয়ে তুলতে সাহায্য করবে কেন তারা এই পণ্যটি কিনবে।
ছবি আপলোড করুন
প্রতিটি পণ্যের জন্য একটি ফিচার ইমেজ বা মূল ছবি থাকা প্রয়োজন। এটি পণ্যের প্রধান চেহারা হিসেবে প্রদর্শিত হবে। চাইলে গ্যালারি ইমেজও যুক্ত করতে পারেন, যেখানে পণ্যের বিভিন্ন দিক বা ভিন্ন ভিন্ন কোণ থেকে ছবি থাকবে। এতে গ্রাহকরা পণ্যের সম্পর্কে আরও বিস্তারিত ধারণা পায়।
মূল্য নির্ধারণ করুন
Product Data সেকশনে গিয়ে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। এখানে Regular Price (মূল দাম) এবং Sale Price (ছাড়ের দাম) নির্ধারণ করা যায়। আপনি যদি কোনো বিশেষ অফার বা ডিসকাউন্ট চালু করতে চান, তাহলে তার সময়সীমাও নির্ধারণ করা যাবে।
স্টক ও ইনভেন্টরি তথ্য দিন
Inventory ট্যাবে গিয়ে SKU কোড (যদি থাকে) এবং স্টক পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। আপনি চাইলে ‘Manage stock’ অপশন চালু করে WooCommerce-কে স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্টক ট্র্যাক করতে দিতে পারেন। ‘Stock status’ থেকে পণ্যটি স্টকে আছে কিনা তা নির্বাচন করতে হবে।
ক্যাটাগরি ও ট্যাগ নির্ধারণ করুন
পণ্যের ধরন অনুযায়ী ক্যাটাগরি নির্বাচন করুন অথবা নতুন ক্যাটাগরি যুক্ত করুন। ট্যাগ ব্যবহার করে পণ্যের অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্য বা সম্পর্কযুক্ত শব্দ যুক্ত করা যায়, যা গ্রাহকদের সার্চ বা ফিল্টার করতে সাহায্য করে।
Publish করুন
সব তথ্য পূরণ হয়ে গেলে উপরের Publish বাটনে ক্লিক করে পণ্যটি লাইভ করে দিন। আপনি চাইলে Draft হিসেবে সংরক্ষণ করতে পারেন অথবা পণ্যটি ভবিষ্যতে প্রকাশ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করতে পারেন।
৮. পেমেন্ট গেটওয়ে সেটআপ
WooCommerce > Settings > Payments
একটি সফল ই-কমার্স ব্যবসার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো একটি কার্যকর ও নিরাপদ পেমেন্ট সিস্টেম। WooCommerce ব্যবহার করে আপনি সহজেই বিভিন্ন ধরনের পেমেন্ট গেটওয়ে সেটআপ করতে পারবেন। এর জন্য আপনাকে WordPress Dashboard থেকে WooCommerce > Settings > Payments অপশনে যেতে হবে। এখানে WooCommerce-এর ডিফল্ট পেমেন্ট অপশনগুলোর একটি তালিকা দেখতে পাবেন, যেগুলোর প্রতিটিকে আপনি Enable/Disable করতে পারবেন এবং আলাদা করে কনফিগার করতে পারবেন।
PayPal
PayPal হলো বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত একটি জনপ্রিয় পেমেন্ট গেটওয়ে, যা WooCommerce-এ ডিফল্টভাবে অন্তর্ভুক্ত থাকে। এটি ক্রেতাদের ইমেইলের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে দেয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে পেমেন্ট প্রসেস করে। আপনি WooCommerce-এ PayPal সেটআপ করতে চাইলে একটি PayPal Business Account থাকা প্রয়োজন। WooCommerce Settings-এ গিয়ে PayPal অপশন Enable করে ইমেইল অ্যাড্রেস ও API তথ্য দিয়ে কনফিগার করতে হবে।
Stripe
Stripe আরেকটি সহজ ও সুরক্ষিত পেমেন্ট গেটওয়ে, যা ক্রেডিট/ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট গ্রহণের সুবিধা দেয়। Stripe ব্যবহার করতে হলে আপনাকে প্রথমে Stripe-এ একটি একাউন্ট খুলতে হবে। এরপর Stripe প্লাগইন ইনস্টল করে API কী WooCommerce-এ বসাতে হবে। Stripe-এর বিশেষ সুবিধা হলো এটি সাইটের মধ্যেই পেমেন্ট প্রসেস করে, গ্রাহককে অন্য কোথাও রিডাইরেক্ট করে না।
Direct Bank Transfer
এই অপশনটি মূলত অফলাইন পেমেন্টের জন্য ব্যবহার করা হয়। যখন কোনো গ্রাহক অনলাইন ট্রান্সফার বা ব্যাংক ডিপোজিটের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে চায়, তখন এই গেটওয়ে ব্যবহার করা হয়। আপনি WooCommerce-এ আপনার ব্যাংক নাম, একাউন্ট নম্বর, ব্রাঞ্চ কোড ইত্যাদি তথ্য দিয়ে এই পেমেন্ট পদ্ধতি চালু করতে পারবেন। পেমেন্ট কনফার্ম করার আগে আপনাকে ম্যানুয়ালি চেক করতে হবে।
Cash on Delivery
বাংলাদেশের মতো দেশে এখনো অনেক গ্রাহক ক্যাশ অন ডেলিভারি পছন্দ করে। WooCommerce-এ আপনি সহজেই এই অপশনটি চালু করতে পারবেন। এটি ক্রেতাদের জন্য নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি এবং ব্যবসার শুরুতে এই সিস্টেম অনেক কাজে আসে। আপনি চাইলে নির্দিষ্ট শিপিং জোন বা ক্যাটাগরির জন্য এই অপশন সীমাবদ্ধ করতে পারেন।
আপনি চাইলে bKash, Nagad, বা SSLCommerz যুক্ত করতে পারেন (প্রয়োজনীয় প্লাগইন ব্যবহার করে)
স্থানীয় পেমেন্ট গেটওয়ে হিসেবে bKash, Nagad, ও SSLCommerz বর্তমানে বাংলাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়। WooCommerce-এ এই গেটওয়েগুলো যুক্ত করার জন্য নির্দিষ্ট প্লাগইন ব্যবহার করতে হয়, যা আপনি WordPress Plugin Directory বা সংশ্লিষ্ট কোম্পানির অফিসিয়াল সাইট থেকে সংগ্রহ করতে পারেন। প্লাগইন ইনস্টল করার পর আপনাকে API Key, Merchant ID, এবং Secret Key এর মতো তথ্য দিয়ে কনফিগার করতে হবে। এই গেটওয়েগুলো যুক্ত করলে আপনার সাইট স্থানীয় গ্রাহকদের জন্য আরও গ্রহণযোগ্য ও ব্যবহারবান্ধব হয়ে উঠবে।
৯. শিপিং সেটআপ
WooCommerce > Settings > Shipping
একটি সফল ই-কমার্স সাইট পরিচালনার জন্য পণ্যের ডেলিভারি ব্যবস্থা ঠিকভাবে গঠন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। WooCommerce আপনাকে শিপিং সিস্টেম কাস্টমাইজ করার সুবিধা দেয়। প্রথমে WordPress ড্যাশবোর্ড থেকে WooCommerce > Settings > Shipping এ যান। এখানে আপনি নতুন শিপিং জোন তৈরি করতে পারবেন, যেখানে আপনি নির্দিষ্ট দেশ, অঞ্চল বা জিপ কোড অনুযায়ী আলাদা শিপিং নিয়ম প্রযোজ্য করতে পারবেন।
নতুন শিপিং জোন, রেট, ও শর্ত যোগ করুন
শিপিং জোন তৈরি করার পর সেখানে আপনি বিভিন্ন ধরনের শিপিং পদ্ধতি যোগ করতে পারবেন, যেমন: Flat Rate (একটি নির্দিষ্ট মূল্য), Free Shipping (নির্দিষ্ট শর্তে বিনামূল্যে), অথবা Local Pickup (ক্রেতা নিজে এসে পণ্য সংগ্রহ করবে)। প্রতিটি শিপিং পদ্ধতির জন্য আপনি প্রয়োজন অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করতে পারবেন এবং চাইলে শর্ত যুক্ত করতে পারবেন, যেমন—মিনিমাম অর্ডার ভ্যালু বা কুপন কোড প্রয়োগের পরে ফ্রি শিপিং প্রযোজ্য হবে। আপনি চাইলে নির্দিষ্ট ক্যাটাগরি বা পণ্যের জন্য আলাদা শিপিং ক্লাসও নির্ধারণ করতে পারবেন।
১০. অর্ডার ম্যানেজমেন্ট
WooCommerce > Orders
আপনার ই-কমার্স সাইটে যখনই একটি অর্ডার প্লেস করা হবে, তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে WooCommerce > Orders সেকশনে তালিকাভুক্ত হবে। এখান থেকে আপনি প্রতিটি অর্ডারের বিস্তারিত দেখতে পারবেন—গ্রাহকের নাম, অর্ডারের তারিখ, পণ্যের তালিকা, মোট মূল্য, পেমেন্ট পদ্ধতি এবং শিপিং ঠিকানা ইত্যাদি। আপনি চাইলে অর্ডারের পেমেন্ট স্ট্যাটাস পরিবর্তন করতে পারেন, যেমন: Processing, On hold, Completed বা Cancelled।
আপনি পেমেন্ট স্ট্যাটাস, ডেলিভারি স্ট্যাটাস আপডেট করতে পারবেন
একটি অর্ডার যখন পেমেন্ট নিশ্চিত হয়, তখন সেটিকে “Processing” বা “Completed” স্ট্যাটাসে সেট করা যায়। একইভাবে, ডেলিভারির জন্য যখন পণ্য প্রস্তুত থাকে, তখন “Shipped” বা “Completed” স্ট্যাটাস দেওয়া হয়। এর ফলে গ্রাহকরা তাদের অর্ডারের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সহজেই জানতে পারে এবং বিশ্বাস বাড়ে। আপনি চাইলে গ্রাহককে অর্ডার স্ট্যাটাস পরিবর্তনের সময় ইমেইল নোটিফিকেশনও পাঠাতে পারেন।
১১. কুপন ও ডিসকাউন্ট সিস্টেম
Marketing > Coupons > Add Coupon
অনলাইন ব্যবসায় বিক্রি বাড়াতে কুপন কোড এবং ডিসকাউন্ট সিস্টেম অত্যন্ত কার্যকরী একটি পদ্ধতি। WooCommerce এ আপনি সহজেই কুপন কোড তৈরি করতে পারেন। এর জন্য ড্যাশবোর্ডে গিয়ে Marketing > Coupons > Add Coupon এ ক্লিক করতে হবে। এরপর একটি কুপন কোড দিন এবং চাইলে কুপনের নাম বা বর্ণনা যুক্ত করুন।
ছাড়ের শর্ত, মেয়াদ ও ব্যবহার সীমা নির্ধারণ করতে পারবেন
কুপন তৈরির সময় আপনি কত শতাংশ বা নির্দিষ্ট পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে তা নির্ধারণ করতে পারবেন। এছাড়াও আপনি চাইলে একটি নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির পণ্যে কুপন প্রযোজ্য করবেন কিনা, কতবার ব্যবহার করা যাবে, একজন গ্রাহক কয়বার ব্যবহার করতে পারবে, এবং কুপনের মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ কী হবে—এইসব গুরুত্বপূর্ণ শর্ত যুক্ত করা যাবে। কুপন ব্যবহারে গ্রাহকের আগ্রহ বাড়ে এবং এটি পুনঃক্রয়ের সম্ভাবনাও বৃদ্ধি করে।
১২. রিপোর্ট ও অ্যানালাইটিক্স
WooCommerce > Analytics
একটি ই-কমার্স ব্যবসার উন্নতির জন্য ডাটা বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। WooCommerce-এর Analytics ট্যাব আপনাকে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টিং সিস্টেম সরবরাহ করে, যেখানে আপনি বিভিন্ন তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ পেতে পারেন। ড্যাশবোর্ড থেকে WooCommerce > Analytics এ গিয়ে আপনি বিভিন্ন রিপোর্ট দেখতে ও ফিল্টার করতে পারবেন।
Sales Report
এই সেকশনে আপনি আপনার দোকানের মোট বিক্রি, প্রতিদিনের বিক্রি, রিফান্ডের পরিমাণ, এবং মোট অর্ডারের সংখ্যা দেখতে পারবেন। আপনি চাইলে নির্দিষ্ট তারিখ অনুযায়ী বা নির্দিষ্ট প্রোডাক্ট ক্যাটাগরি অনুযায়ী বিক্রির পরিসংখ্যান জানতে পারবেন। এটি আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে কোন সময় সেল বেশি হচ্ছে এবং কোন সময় কম।
Product Performance
এই রিপোর্টে আপনি জানতে পারবেন কোন পণ্য কতবার বিক্রি হয়েছে, কতটা স্টক রয়েছে, এবং কোন পণ্য সবচেয়ে বেশি লাভজনক। এটি আপনার ইনভেন্টরি পরিচালনায় সহায়ক এবং ভবিষ্যতে কোন পণ্য রিস্টক করা দরকার তা নির্ধারণে সাহায্য করে।
Customer Details
Customer রিপোর্টের মাধ্যমে আপনি দেখতে পারবেন আপনার সাইটে কতজন ইউনিক ক্রেতা অর্ডার করেছে, কে সবচেয়ে বেশি অর্ডার করেছে, এবং কোন অঞ্চলের ক্রেতারা বেশি সক্রিয়। আপনি চাইলে নির্দিষ্ট গ্রাহকের অর্ডার হিস্টোরিও ট্র্যাক করতে পারবেন।
Order Summary
এই অংশে মোট অর্ডার সংখ্যা, সফল অর্ডার, পেন্ডিং অর্ডার, এবং ক্যানসেল হওয়া অর্ডার ইত্যাদির সারাংশ পাওয়া যায়। এটি ব্যবস্থাপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যখন আপনি একাধিক অর্ডার হ্যান্ডল করছেন এবং দ্রুত সার্ভিস নিশ্চিত করতে চাইছেন।
১৩. থিম ও ডিজাইন কাস্টমাইজেশন
Appearance > Customize
আপনার ওয়েবসাইটকে পেশাদার এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব করতে হলে এর ডিজাইন ও লেআউট কাস্টমাইজ করতেই হবে। WooCommerce একটি সাধারণ থিমের মধ্যেও কাস্টমাইজেশন অপশন যুক্ত করে দেয়, যা আপনি Appearance > Customize অপশন থেকে কনফিগার করতে পারবেন।
Header/Footer ডিজাইন
Header অংশে আপনি আপনার লোগো, মেনু, সার্চ বক্স, এবং কার্ট আইকন যুক্ত করতে পারবেন। Footer অংশে কন্টাক্ট ইনফো, সোশ্যাল লিঙ্ক, এবং কুইক লিঙ্ক যুক্ত করা যায়। এই অংশগুলো ওয়েবসাইটের পরিচয় ও ইউজার নেভিগেশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
কালার ও ফন্ট পরিবর্তন
আপনার ব্র্যান্ডিংয়ের সাথে মিলিয়ে ওয়েবসাইটের রঙ ও ফন্ট পরিবর্তন করতে পারবেন। আপনি চাইলে নির্দিষ্ট অংশে আলাদা কালার অ্যাপ্লাই করতে পারেন, যেমন হেডার ব্যাকগ্রাউন্ড, বাটনের কালার, অথবা লিঙ্কের কালার। ফন্ট পরিবর্তনের মাধ্যমে পাঠযোগ্যতা ও প্রফেশনাল লুক নিশ্চিত করা যায়।
Home Page Layout
হোমপেজে আপনি কাস্টম সেকশন যুক্ত করতে পারবেন যেমন: ফিচার্ড প্রোডাক্ট, নতুন আসা পণ্য, জনপ্রিয় ক্যাটাগরি, ব্যানার বা স্লাইডার। Elementor বা Gutenberg ব্যবহার করে চাইলে ড্র্যাগ-এন্ড-ড্রপ ভিত্তিক ডিজাইনও করতে পারবেন।
Product Page Styling
পণ্যের বিস্তারিত পৃষ্ঠায় আপনি ইমেজ গ্যালারি, প্রাইসিং, রিভিউ, রিলেটেড প্রোডাক্ট, এবং Add to Cart বাটনের অবস্থান কাস্টমাইজ করতে পারেন। এই অংশটি ক্রেতাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তাই এটি স্পষ্ট ও আকর্ষণীয় রাখা দরকার।
১৪. অতিরিক্ত দরকারি প্লাগইন
Elementor: Page builder
Elementor হলো একটি জনপ্রিয় ড্র্যাগ-এন্ড-ড্রপ পেজ বিল্ডার প্লাগইন যা WordPress ওয়েবসাইটকে ডিজাইন করার কাজকে অনেক সহজ ও স্বজ্ঞাত করে তোলে। এর মাধ্যমে আপনি কোডিং ছাড়াই আপনার ওয়েবসাইটের হোমপেজ, ল্যান্ডিং পেজ, এবং পণ্যের পৃষ্ঠা নিজস্বভাবে ডিজাইন করতে পারবেন। Elementor-এ রয়েছে রেডিমেড ব্লক, উইজেট এবং সেকশন, যেগুলো ড্র্যাগ করে পেজে বসিয়ে দিতে পারেন। WooCommerce-এর জন্য এটি বিশেষভাবে উপযোগী কারণ এতে আপনি প্রোডাক্ট গ্রিড, প্রাইস ট্যাব, অ্যাড টু কার্ট বাটনসহ আরও অনেক উপাদান যুক্ত করতে পারেন।
Yoast SEO: SEO উন্নত করতে
Yoast SEO হলো WordPress প্ল্যাটফর্মে সর্বাধিক ব্যবহৃত SEO প্লাগইন, যা আপনার কনটেন্টের সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন নিশ্চিত করে। আপনি পোস্ট বা পেজ লেখার সময় প্লাগইনটি রিডেবিলিটি ও কীওয়ার্ড অপ্টিমাইজেশনের রিকমেন্ডেশন দেয়। এটি XML সাইটম্যাপ তৈরি, মেটা ট্যাগ নিয়ন্ত্রণ এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্রিভিউ কনফিগার করার সুবিধাও দেয়, যা আপনার WooCommerce পণ্যের জন্য Google-এ ভালো র্যাংক পেতে সাহায্য করে।
LiteSpeed Cache: Site স্পিড বাড়াতে
LiteSpeed Cache প্লাগইন ব্যবহার করে আপনি আপনার ওয়েবসাইটের গতি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে পারবেন। এটি ক্যাশিং, CSS/JS মিনিফিকেশন, Lazy Load এবং Image Optimization এর মতো বৈশিষ্ট্য সরবরাহ করে। একটি দ্রুত সাইট শুধু ইউজার এক্সপেরিয়েন্স উন্নত করে না, বরং সার্চ র্যাংকিং উন্নত করতেও সাহায্য করে, যা বিক্রয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
WP Mail SMTP: ইমেইল ডেলিভারি নিশ্চিত করতে
WordPress ডিফল্টভাবে ইমেইল পাঠালেও অনেক সময় তা স্প্যামে চলে যায় বা পৌঁছায় না। WP Mail SMTP প্লাগইন ইমেইল ডেলিভারি সিস্টেমকে ঠিক করে তোলে। এটি Gmail, Sendinblue, Mailgun, বা অন্য SMTP সার্ভার ব্যবহার করে ইমেইল নিশ্চিতভাবে পাঠায়। ফলে অর্ডার কনফার্মেশন, পেমেন্ট রিসিপ্ট বা কাস্টমার নোটিফিকেশন ঠিকভাবে পৌঁছে যায়।
UpdraftPlus: ব্যাকআপ নিতে
WordPress সাইটের নিরাপত্তার জন্য নিয়মিত ব্যাকআপ রাখা জরুরি। UpdraftPlus হলো একটি নির্ভরযোগ্য ব্যাকআপ প্লাগইন যা আপনার সাইটের সম্পূর্ণ ব্যাকআপ তৈরি করে Google Drive, Dropbox, বা FTP-তে সংরক্ষণ করতে পারে। যেকোনো সময় সাইটে সমস্যা হলে আপনি সহজেই পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে পারবেন।
১৫. সিকিউরিটি ও ব্যাকআপ
Strong Admin Password ব্যবহার করুন
ওয়েবসাইট অ্যাডমিন একাউন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবশ্যই একটি জটিল ও শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে। সাধারণ ও সহজে অনুমানযোগ্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার করলে হ্যাকারদের কাছে আপনি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেন। পাসওয়ার্ডে ছোট হাতের অক্ষর, বড় হাতের অক্ষর, সংখ্যা ও স্পেশাল ক্যারেক্টার ব্যবহার করে একটি ইউনিক পাসওয়ার্ড তৈরি করুন।
Limit Login Attempts প্লাগইন ব্যবহার করুন
সাইটে Brute Force আক্রমণ রোধে Limit Login Attempts প্লাগইন ব্যবহার করা অত্যন্ত কার্যকর। এটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যর্থ লগইন প্রচেষ্টার পর আইপি ব্লক করে দেয়, ফলে হ্যাকারদের দ্বারা একের পর এক পাসওয়ার্ড অনুমান করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এটি WooCommerce সাইটের নিরাপত্তা বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে।
নিয়মিত ব্যাকআপ রাখুন
ওয়েবসাইটের কোনো তথ্য হারিয়ে গেলে বা সাইবার আক্রমণের শিকার হলে ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য ব্যাকআপ রাখা জরুরি। নিয়মিত ব্যাকআপের মাধ্যমে আপনি যেকোনো সময় সাইট রিস্টোর করতে পারবেন। সপ্তাহে অন্তত একবার ব্যাকআপ নেওয়া হলে তা ঝুঁকি অনেকটা কমিয়ে আনে।
Wordfence Security প্লাগইন ইনস্টল করুন
Wordfence হলো WordPress-এর একটি শক্তিশালী সিকিউরিটি প্লাগইন। এটি ফায়ারওয়াল, ম্যালওয়্যার স্ক্যানার, এবং রিয়েলটাইম থ্রেট ডিটেকশন সরবরাহ করে। এটি অস্বাভাবিক লগইন অ্যাটেম্পট, ভাইরাস ইনজেকশন বা সন্দেহজনক ফাইল পরিবর্তন হলে আপনাকে সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেয়। Wordfence ইনস্টল করে আপনি সাইটের জন্য একটি নিরাপদ ঢাল তৈরি করতে পারবেন।