কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং হল কম্পিউটার বা ডিজিটাল ডিভাইসগুলির মধ্যে তথ্য ও সংস্থান ভাগাভাগির একটি প্রক্রিয়া। এটি এমন একটি পদ্ধতি যা বিভিন্ন ডিভাইসকে একটি একীভূত সিস্টেমে সংযুক্ত করে, যাতে তারা ডাটা, সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার রিসোর্স এবং অন্যান্য ডিজিটাল সম্পদ ভাগাভাগি করতে পারে। এই নেটওয়ার্কগুলি সাধারণত বিভিন্ন প্রকারের ক্যাবল, সিগন্যাল, এবং ওয়্যারলেস টেকনোলজির মাধ্যমে গঠিত হয় এবং তারা বিভিন্ন নেটওয়ার্ক টপোলজি অনুসরণ করে। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিভিন্ন কম্পিউটার বা ডিভাইসগুলি তথ্য আদান-প্রদান, সম্পদ শেয়ার করা, এবং যৌথভাবে কাজ করা সম্ভব হয়। কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং কাকে বলে এই সম্পর্কে আরো নিচে পড়ুন।
নেটওয়ার্কের প্রকারভেদ:
মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্ক (MAN) হলো একটি প্রকার নেটওয়ার্ক যা একটি শহর বা মহানগরীতে প্রসারিত হয়। এটি লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (LAN) এবং ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক (WAN) এর মধ্যে একটি মধ্যস্থ স্তরে অবস্থিত হয়। MAN এ অনেকগুলি লোকাল নেটওয়ার্কের (LAN) মধ্যে তথ্য অবতরণ ও সংযোগ সম্পন্ন হয় এবং এটি বড় দূরত্বের মধ্যে কন্ট্রোল এবং সংযোগ স্থাপনে ব্যবহৃত হয়। MAN এ মোট ব্যান্ডউইথ বা তথ্য সংযোগের দ্বারা বিশেষ কিছু সুবিধা প্রদান করা হয়, এমনকি একটি মহানগরে তার সংযোগও হতে পারে। মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্কের উদাহরণ হতে পারে একটি সিটি মান নেটওয়ার্ক, যেমন একটি বড় শহর বা মেট্রোপলিটান এলিয়ারে একটি বিশাল বাড়ির জন্য একটি নেটওয়ার্ক।
ডাটা ট্রান্সমিশন মিডিয়া:
ডাটা ট্রান্সমিশনের মিডিয়া হতে পারে ওয়ায়ার্ড এবং ওয়ায়ারলেস দুই ধরণের মূল ক্যাটাগরিতে। ওয়ায়ার্ড মিডিয়া হলো তামা ক্যাবল, ফাইবার অপটিক্স, এবং অন্যান্য সম্পাদিত ক্যাবল সহ প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য প্রেরণের ক্ষমতা হয়। এটি স্থানীয় নেটওয়ার্কে এবং কম দূরত্বে তথ্য সংযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়। ওয়ায়ারলেস মিডিয়া তে রেডিও তরঙ্গ, মাইক্রোওয়েভ, ইনফ্রারেড ইত্যাদি অংশ থাকতে পারে। এটি তথ্য বিনামূল্যে বায়োসিগন্যালের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপনে ব্যবহৃত হয়, যা ব্যক্তিগত ডিভাইসের মধ্যে তথ্য প্রেরণ করতে সাহায্য করে। ওয়ায়ারলেস মিডিয়া বৃহত্তর দূরত্বে এবং চলমান সংযোগে কাজ করে, যা ব্যবহারকারীদের আলাদা করে তুলে ধরে এবং চলমান বাণিজ্যিক ব্যবসায়িক প্রযুক্তিতে ব্যবহার করা হয়।
নেটওয়ার্ক টপোলজি:
নেটওয়ার্ক টপোলজি হলো সংযোগিত ডিভাইসগুলির বিন্যাস বা সারণির ধারাবাহিক অবস্থা, যা নেটওয়ার্কের সংগঠনের জন্য কৌশলগত বিবেচনা করে। তথ্য প্রেরণ ও প্রাপ্তির মাধ্যমে এবং ডাটা পাঠানোর মাধ্যমে ডিভাইসগুলি একে অপরের সাথে সংযোগ স্থাপনের উপায়কে টপোলজি বলা হয়।
বাস টপোলজি একটি একক সেন্ট্রাল ক্যাবলে সংযুক্ত সব ডিভাইস থাকে, যা সহজ সংযোগ এবং সাধারিতা প্রদান করে। স্টার টপোলজিতে সব ডিভাইস একটি কেন্দ্রীয় হাবে সংযুক্ত, যা সিস্টেমকে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা এবং নির্গমন করতে সাহায্য করে। রিং টপোলজিতে প্রতিটি ডিভাইস পরস্পরের সাথে একটি বৃত্তাকার লুপে সংযুক্ত, যা ডেটা পাঠানো ও প্রাপ্ত করতে একটি দিকের দিকে চলতে দেয়। প্রতিটি টপোলজির উপযোগকে বিবেচনা করে ওয়ার্ক ডিজাইন করা হয়, কারণ এটি নেটওয়ার্কের স্থিতি, কার্যক্ষমতা এবং সুরক্ষা প্রভাবিত করতে পারে।
নেটওয়ার্ক হার্ডওয়্যার:
রাউটার, সুইচ, এবং হাব হলো নেটওয়ার্ক হার্ডওয়্যার যা নেটওয়ার্ক সংযোগ এবং ডাটা পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
রাউটার হলো একটি ডিভাইস যা বিভিন্ন নেটওয়ার্ক সংযোগ করে এবং ডাটা পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি ডেটা পাঠাতে এবং প্রাপ্ত করতে সুরক্ষিত পথ নির্ধারণ করে এবং নেটওয়ার্কের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে।
সুইচ হলো LAN-এ ডিভাইসগুলির মধ্যে ডাটা বিনিময় নিয়ন্ত্রণ করে। এটি ডিভাইসের মধ্যে সরাসরি সংযোগ তৈরি করে এবং স্থানীয় নেটওয়ার্কে দ্রুত ডাটা পাঠাতে সহায়ক।
হাব হলো বহু ডিভাইসকে একটি নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি ডাটা পাঠাতে এবং প্রাপ্ত করতে সহায়ক হয় এবং নেটওয়ার্ক ট্র্যাফিককে ভাগ করে তুলে ধরতে সাহায্য করে।
নেটওয়ার্ক প্রোটোকল ও মান:
ট্রান্সমিশন কন্ট্রোল প্রোটোকল/ইন্টারনেট প্রোটোকল (TCP/IP) হলো ইন্টারনেটে ডাটা প্রেরণের মূল প্রোটোকল। এটি ডাটা প্রসারণ এবং গ্রহণের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং নেটওয়ার্কের সঠিক পরিচালনা সমর্থন করে।
হাইপারটেক্সট ট্রান্সফার প্রোটোকল (HTTP) ওয়েব পৃষ্ঠাগুলি প্রেরণ এবং গ্রহণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি ওয়েব ব্রাউজার এবং ওয়েব সার্ভার মধ্যে তথ্য পাঠাতে সাহায্য করে এবং হাইপারটেক্সট ডকুমেন্ট বানানো হয়।
ওয়্যারলেস প্রোটোকল (যেমন Wi-Fi, Bluetooth) হলো বিভিন্ন ওয়্যারলেস যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়। এগুলি বেসিক ছাড়াই বেগ, সহজ সংযোগ এবং পোর্টেবিলিটি উন্নত করে এবং বিভিন্ন ডিভাইসে বাস্তবায়ন হতে সাহায্য করে।
নেটওয়ার্ক সুরক্ষা:
নেটওয়ার্ক সুরক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা তথ্যের সুরক্ষা ও প্রবাহনে সঠিকভাবে অব্যহতি নিশ্চিত করে। এতে সুরক্ষার জন্য বেশিরভাগ নেটওয়ার্কে তিনটি প্রধান উপায় ব্যবহার হয়:
ফায়ারওয়াল: এটি অনাকাংখিত ট্রাফিক বাধা দেয় এবং কেবল অনুমোদিত করা ডাটা প্রবাহ দেয়, এতে ভ্যান্ডালিজম এবং নেটওয়ার্ক সুরক্ষা বাড়ানো হয়।
এনক্রিপশন: ডাটা গোপনীয়তা রক্ষা করে এবং অনুমোদিত ব্যক্তিদের বাইরে তথ্যের অধিকার হারিয়ে না দেয়।
অথেন্টিকেশন ও অথরাইজেশন: এটি ব্যবহারকারীর পরিচয় ও অধিকার নির্ধারণে সাহায্য করে, যাতে অকান্তিত ব্যবহারকারীরা নেটওয়ার্কে প্রবেশ করতে পারে না। এই উপায়ে তথ্যের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা উন্নত হয় এবং নেটওয়ার্কের সুরক্ষা বাড়ায়।
আরো পড়ুনঃ কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এর উদ্দেশ্য কি