বর্তমান ডিজিটাল যুগে ওয়েবসাইট বা অনলাইন স্টোর পরিচালনা করা মানেই অসংখ্য অ্যাপ ও প্লাগইন ব্যবহার করা। প্লাগইন এবং অ্যাপগুলি ওয়েবসাইটের ফাংশনালিটি বাড়ায়, ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা উন্নত করে এবং ওয়েবসাইটের ব্যবস্থাপনা সহজ করে তোলে। এই প্রবন্ধে আমরা Essential Plugins & Apps ইন্টিগ্রেশন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব, যা আপনাকে ওয়েবসাইট পরিচালনায় সম্পূর্ণ ধারণা দেবে।
Essential Plugins ও Apps কী?
একটি ওয়েবসাইট বা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের স্ট্যান্ডার্ড ফিচারগুলো সীমিত। এগুলোর কার্যকারিতা বাড়াতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন প্লাগইন এবং অ্যাপ। সহজ কথায়, প্লাগইন হলো এমন সফটওয়্যার কম্পোনেন্ট, যেটা কোনো CMS (Content Management System) যেমন WordPress, Shopify, বা Wix এর সাথে যুক্ত হয়ে নির্দিষ্ট ফাংশনালিটি যুক্ত করে। Apps হচ্ছে বিশেষ করে Shopify এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে ব্যবহৃত হয় এবং প্লাগইনের মতোই কাজ করে।
কেন Essential Plugins & Apps প্রয়োজন?
ওয়েবসাইট বা অনলাইন স্টোরের স্ট্যান্ডার্ড ফাংশনালিটি প্রায়ই যথেষ্ট নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড সেটআপ শুধুমাত্র বেসিক ফিচারগুলোই অফার করে, যা একটি ওয়েবসাইট বা স্টোরকে পরিপূর্ণভাবে কার্যকর করতে পারে না। কিছু নির্দিষ্ট কাজে বা প্রয়োজন অনুযায়ী বাড়তি ফাংশন যুক্ত করতে হয়। যেমন, ওয়েবসাইটের SEO উন্নত করতে বিভিন্ন অপ্টিমাইজেশন ফিচার প্রয়োজন, যা স্ট্যান্ডার্ড সেটআপে থাকে না। এছাড়াও, সিকিউরিটি মজবুত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, যার জন্য শক্তিশালী সিকিউরিটি প্লাগইন প্রয়োজন পড়ে। ওয়েবসাইট স্পিড বৃদ্ধি করাও একটি অত্যাবশ্যকীয় কাজ, কারণ দ্রুত লোডিং সাইট গ্রাহকের সন্তুষ্টি বৃদ্ধি করে এবং SEO র্যাংকিংয়ে ভালো ভূমিকা রাখে।
সহজে কাস্টমাইজেশন করার ক্ষমতা থাকলে ব্যবহারকারী তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সহজেই সাইটের ডিজাইন ও ফিচার পরিবর্তন করতে পারেন, যা স্ট্যান্ডার্ড সেটআপে সীমিত থাকে। পেমেন্ট গেটওয়ে সংযুক্ত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যা সহজেই প্লাগইন বা অ্যাপের মাধ্যমে সম্ভব। এছাড়াও, কাস্টমার সার্ভিসকে আরও সহজ এবং দ্রুত করতে লাইভ চ্যাট বা অন্যান্য সাপোর্টিং অ্যাপ ব্যবহার করা জরুরি। এই সমস্ত অতিরিক্ত ফিচার এবং সুবিধাগুলো শুধুমাত্র প্লাগইন এবং অ্যাপ ইন্টিগ্রেশনের মাধ্যমে সহজেই যুক্ত করা যায়।
ওয়ার্ডপ্রেসের জন্য প্রয়োজনীয় Essential Plugins
১. Elementor Page Builder
Elementor একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং ব্যবহার-বান্ধব পেজ বিল্ডার প্লাগইন। এই প্লাগইনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা ড্র্যাগ-এন্ড-ড্রপ পদ্ধতিতে খুব সহজে ওয়েবসাইটের ডিজাইন করতে পারেন। যারা ওয়েব ডিজাইনে অভিজ্ঞ নয়, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ সমাধান, কারণ এটি ব্যবহারে কোনো কোডিং অভিজ্ঞতার প্রয়োজন পড়ে না। এর মাধ্যমে সরাসরি লাইভ এডিটিং সুবিধা পাওয়া যায়, যা ডিজাইনারদের কাজ অনেক দ্রুত করে দেয়। মোবাইল রেসপন্সিভ ডিজাইন নিশ্চিত করার পাশাপাশি অসংখ্য সুন্দর এবং প্রফেশনাল টেমপ্লেট সহজেই ব্যবহার করা যায়, যার ফলে ব্যবহারকারীরা তাদের ওয়েবসাইটকে আকর্ষণীয় এবং পেশাদারী করে তুলতে পারে।
২. Yoast SEO
Yoast SEO হলো ওয়েবসাইটের SEO অপটিমাইজেশনের জন্য অন্যতম জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত প্লাগইন। এটি আপনার ওয়েবসাইটের সার্চ ইঞ্জিন র্যাংকিং উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে সাহায্য করে। Yoast SEO প্লাগইনের মাধ্যমে খুব সহজে XML Sitemap তৈরি করা যায়, যা গুগলের জন্য আপনার ওয়েবসাইটকে সহজে ক্রলযোগ্য করে তোলে। Meta Tag অপটিমাইজেশন করাও এই প্লাগইনের গুরুত্বপূর্ণ একটি ফিচার, যা সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে ওয়েবসাইটের CTR (Click-Through Rate) বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও, Yoast SEO কন্টেন্টের রিডেবিলিটি বিশ্লেষণ করে, যাতে ব্যবহারকারী সঠিক ও সহজপাঠ্য কন্টেন্ট তৈরি করতে পারেন।
৩. LiteSpeed Cache
ওয়েবসাইটের স্পিড বৃদ্ধি করার জন্য ক্যাশ প্লাগইন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে সবচেয়ে কার্যকর এবং বহুল ব্যবহৃত প্লাগইন হলো LiteSpeed Cache। এটি দ্রুত পেজ লোডিং নিশ্চিত করে, যা ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করে। এই প্লাগইনের মাধ্যমে ব্রাউজার ক্যাশিং ব্যবহার করে ওয়েবসাইটের বিভিন্ন পেজ খুব দ্রুত লোড হয়। ইমেজ অপটিমাইজেশনও এই প্লাগইনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফিচার, যা ইমেজের আকার কমিয়ে পেজ লোডিং আরও দ্রুত করে।
৪. WP Mail SMTP
WP Mail SMTP হলো একটি অপরিহার্য প্লাগইন, যা নিশ্চিত করে আপনার ওয়েবসাইট থেকে পাঠানো সকল ইমেইল সরাসরি ব্যবহারকারীর ইনবক্সে পৌঁছাবে। অনেক সময় ওয়ার্ডপ্রেসের ডিফল্ট মেইলিং সিস্টেমের কারণে ইমেইলগুলো স্প্যাম ফোল্ডারে চলে যায় বা ডেলিভারিই হয় না। WP Mail SMTP প্লাগইন ব্যবহার করলে SMTP সার্ভারের সাথে সংযুক্ত হয়ে ইমেইলের ডেলিভারি রেট নিশ্চিত করা সম্ভব। এছাড়া এই প্লাগইনটি প্রতিটি ইমেইল সংক্রান্ত সমস্যা শনাক্ত করতে Error log রাখে, যা সহজেই সমাধান করতে সাহায্য করে।
৫. UpdraftPlus Backup
ওয়েবসাইটের ব্যাকআপ রাখা হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যা যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা বা সমস্যা মোকাবিলায় সাহায্য করে। UpdraftPlus Backup প্লাগইন ব্যবহার করলে আপনি খুব সহজেই অটোমেটিক ব্যাকআপ শিডিউল করতে পারবেন। এটি আপনার ব্যাকআপ ক্লাউড স্টোরেজে (যেমন Google Drive, Dropbox) সংরক্ষণ করে রাখে, যাতে যে কোনো সময় ও যে কোনো স্থানে থেকে তা রিস্টোর করা যায়। এর রিস্টোরেশন প্রক্রিয়াও অত্যন্ত সহজ এবং দ্রুত।
৬. Wordfence Security
ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে Wordfence একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও শক্তিশালী প্লাগইন। এটি ওয়েবসাইটকে বিভিন্ন ধরনের অনলাইন হুমকি থেকে রক্ষা করে। Wordfence প্লাগইনে Firewall সুরক্ষা থাকে, যা অযাচিত ট্রাফিক এবং ম্যালিশাস অ্যাটাক প্রতিরোধ করে। Malware স্ক্যানিং ফিচারের মাধ্যমে ওয়েবসাইটে থাকা ম্যালওয়্যার দ্রুত শনাক্ত ও অপসারণ করা যায়। এছাড়া Real-time threat protection সুবিধার মাধ্যমে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা প্রতিটি ভিজিটর ও রিকোয়েস্ট বিশ্লেষণ করে অবাঞ্ছিত প্রবেশ ঠেকানো সম্ভব।
Shopify এর জন্য প্রয়োজনীয় Essential Apps
১. Oberlo (ড্রপশিপিং)
ড্রপশিপিং ব্যবসার ক্ষেত্রে Oberlo অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং কার্যকরী একটি অ্যাপ। এটি মূলত Shopify স্টোরের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যেখানে Aliexpress থেকে সরাসরি পণ্যসমূহ আপনার স্টোরে যুক্ত করতে সাহায্য করে। Oberlo ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি সহজেই হাজারো প্রোডাক্ট আপনার স্টোরে যুক্ত করতে পারবেন, এর জন্য আলাদা করে পণ্য ইনপুট করার প্রয়োজন হয় না। এটি অটোমেটিক অর্ডার পূরণ করে দেয়, অর্থাৎ গ্রাহক যখন অর্ডার প্লেস করেন তখন এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে Aliexpress-এ অর্ডারটি সাবমিট করে দেয়। এতে স্টোর মালিকের অর্ডার ম্যানেজমেন্ট অনেক সহজ হয় এবং সময়ও বাঁচে। Oberlo এর আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার হলো ইনভেন্টরি অটো আপডেট। এটি স্টোরে থাকা পণ্যের স্টক বা ইনভেন্টরি অটোমেটিকালি আপডেট করে রাখে, যার ফলে অতিরিক্ত স্টক বা স্টক শেষ হওয়ার ঝুঁকি থাকে না।
২. SEO Booster
Shopify স্টোরের জন্য SEO Booster একটি অত্যন্ত দরকারি অ্যাপ, যা আপনার স্টোরের সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) উন্নত করে ট্রাফিক এবং বিক্রি বাড়াতে সাহায্য করে। এটি On-page SEO অপ্টিমাইজেশনে বিশেষ ভূমিকা রাখে, যার মাধ্যমে প্রতিটি পেজের টাইটেল, মেটা ডেসক্রিপশন, এবং URL গুলোকে SEO ফ্রেন্ডলি করে তুলতে সাহায্য করে। SEO Booster আপনাকে Keyword Suggestion দেয়, যার ফলে আপনি সহজেই ট্রেন্ডিং এবং উপযুক্ত কীওয়ার্ড ব্যবহার করে আপনার কন্টেন্টকে গুগলের প্রথম পাতায় নিয়ে আসতে পারবেন। এই অ্যাপের আরও একটি কার্যকর ফিচার হলো Broken Link Fix, যার মাধ্যমে ভাঙা লিঙ্কগুলো দ্রুত শনাক্ত করে মেরামত করা যায়, ফলে আপনার স্টোরের SEO স্কোর বৃদ্ধি পায়।
৩. Tidio Live Chat
Shopify স্টোরে কাস্টমার সার্ভিস উন্নত করতে Tidio Live Chat অত্যন্ত কার্যকরী এবং জনপ্রিয় একটি অ্যাপ। এটি লাইভ চ্যাটের মাধ্যমে গ্রাহকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগের ব্যবস্থা করে, যা কাস্টমার সন্তুষ্টি বৃদ্ধি করে এবং সেল বাড়াতে সাহায্য করে। এই অ্যাপের অন্যতম শক্তিশালী ফিচার হলো চ্যাটবট তৈরি করার সুবিধা। এর মাধ্যমে আপনার গ্রাহকরা যেকোনো সময় বেসিক ইনফরমেশন এবং সাধারণ প্রশ্নের উত্তর পেতে পারেন। Tidio এর মাধ্যমে লাইভ চ্যাট সুবিধার ফলে গ্রাহকের সমস্যা বা প্রশ্ন দ্রুত সমাধান করা সম্ভব। এটি আপনার ওয়েবসাইটে Visitor Tracking সুবিধাও প্রদান করে, যার মাধ্যমে আপনি গ্রাহকদের আচরণ ও চাহিদা ভালোভাবে বুঝতে পারবেন এবং তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা প্রদান করতে পারবেন।
৪. Klaviyo Email Marketing
Shopify স্টোরের জন্য Klaviyo Email Marketing হলো একটি অত্যন্ত কার্যকর এবং জনপ্রিয় ইমেইল মার্কেটিং অ্যাপ, যা আপনার ব্যবসাকে পরবর্তী লেভেলে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। Klaviyo এর মাধ্যমে আপনি অটোমেটেড ইমেইল ক্যাম্পেইন পরিচালনা করতে পারেন, যা নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট গ্রাহক সেগমেন্টে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাঠানো যায়। এটি ব্যবহার করলে গ্রাহককে সঠিক সময়ে সঠিক মেসেজ দিতে পারবেন, যেমন— নতুন প্রোডাক্টের ঘোষণা, ডিসকাউন্ট অফার, এবং পুনরায় কেনাকাটার রিমাইন্ডার। এই অ্যাপে রয়েছে অসংখ্য কাস্টমাইজড টেমপ্লেট, যেগুলো ব্যবহার করে আপনি আকর্ষণীয় এবং পেশাদার মানের ইমেইল সহজেই তৈরি করতে পারবেন। Klaviyo অ্যাপের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার হলো User Segmentation, যার মাধ্যমে গ্রাহকের ব্যবহার, আগ্রহ এবং পূর্ববর্তী কেনাকাটা অনুসারে তাদের আলাদা করে বিশেষ ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা যায়, ফলে মার্কেটিং এর কার্যকারিতা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।
৫. Judge.me Product Reviews
কাস্টমার রিভিউ সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে Judge.me Product Reviews অ্যাপটি Shopify ব্যবহারকারীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং কার্যকর। Judge.me ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার Shopify স্টোরে সহজেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিভিউ সংগ্রহ করা সম্ভব। গ্রাহকরা পণ্য কেনার পর স্বয়ংক্রিয় ইমেইলের মাধ্যমে তাদের মতামত প্রদান করতে পারবেন, যা আপনার ওয়েবসাইটে সোশ্যাল প্রুফ তৈরি করবে। সোশ্যাল প্রুফ থাকার কারণে নতুন গ্রাহকরা সহজেই আপনার সাইটকে বিশ্বাস করতে শুরু করবে এবং পণ্য কেনার প্রতি আগ্রহী হবে। Judge.me অ্যাপ Google Rich Snippets সাপোর্ট করে, যার ফলে আপনার ওয়েবসাইটে গুগলের সার্চ রেজাল্টে রিভিউ স্টার এবং রেটিং দেখা যাবে। এটি আপনার ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বৃদ্ধি করবে এবং SEO এর জন্যও অত্যন্ত কার্যকরী।
সঠিকভাবে Plugins & Apps ইন্টিগ্রেশনের ধাপসমূহ
ধাপ ১: প্রয়োজনীয়তা বিশ্লেষণ করুন
সঠিকভাবে প্লাগইন এবং অ্যাপ ইন্টিগ্রেশনের প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো আপনার ওয়েবসাইট বা ব্যবসার নির্দিষ্ট প্রয়োজনীয়তাগুলো বিশ্লেষণ করা। এ ধাপে আপনাকে প্রথমেই বুঝতে হবে যে আপনার ওয়েবসাইট বা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য পূরণে কোন কোন ফিচার অত্যন্ত জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, আপনার ব্যবসার জন্য SEO উন্নত করা, ওয়েবসাইট স্পিড বৃদ্ধি করা, সিকিউরিটি নিশ্চিত করা, অথবা কাস্টমার সার্ভিস উন্নত করার প্রয়োজন হতে পারে। প্রতিটি ফিচারকে চিহ্নিত করে একটি তালিকা তৈরি করুন, যাতে পরবর্তীতে প্লাগইন বা অ্যাপ নির্বাচন করতে সুবিধা হয়।
ধাপ ২: প্লাগইন/অ্যাপ নির্বাচন করুন
দ্বিতীয় ধাপে আপনার নির্ধারিত প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী সঠিক প্লাগইন বা অ্যাপ নির্বাচন করতে হবে। প্লাগইন বা অ্যাপ নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম যে বিষয়গুলো দেখতে হবে, সেগুলো হলো ব্যবহারকারীদের রিভিউ, রেটিং এবং বিভিন্ন ফিচার। বিশেষ করে রিভিউ এবং রেটিং দেখে সহজেই বোঝা যায়, কোনো প্লাগইন বা অ্যাপটি ব্যবহারকারীদের জন্য কতটা কার্যকর। ভালো রিভিউ এবং উচ্চ রেটিং এর পাশাপাশি প্লাগইনের আপডেট ফ্রিকোয়েন্সি, সাপোর্ট সিস্টেম, ডেভেলপারদের নির্ভরযোগ্যতাও যাচাই করে নিন। একটি নির্ভরযোগ্য এবং পরিচিত প্লাগইন বা অ্যাপ আপনার ওয়েবসাইট বা স্টোরকে কার্যকর করতে সাহায্য করবে।
ধাপ ৩: প্লাগইন/অ্যাপ ইনস্টলেশন ও অ্যাক্টিভেশন
এই ধাপে নির্বাচিত প্লাগইন বা অ্যাপটিকে CMS প্ল্যাটফর্ম থেকে সরাসরি ইনস্টল করে সেটআপ করতে হবে। যেমন ওয়ার্ডপ্রেসের জন্য প্লাগইন ইনস্টল করতে হলে, WordPress Dashboard থেকে “Plugins” অপশনে গিয়ে নতুন প্লাগইন সার্চ করে ইনস্টল করুন এবং সেটআপ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন। Shopify এর ক্ষেত্রে অ্যাপ স্টোর থেকে সরাসরি অ্যাপ ইনস্টল করতে পারবেন। ইনস্টলের পরে প্রতিটি প্লাগইন বা অ্যাপকে অ্যাক্টিভ করে নিতে হবে। ইনস্টলেশন করার পর অবশ্যই সেটিংস সঠিকভাবে কনফিগার করুন যাতে প্লাগইন বা অ্যাপটি আপনার সাইটের উদ্দেশ্য পূরণে কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে।
ধাপ ৪: ইন্টিগ্রেশন পরীক্ষা করুন
প্লাগইন বা অ্যাপ সেটআপ করার পরের ধাপ হলো ইন্টিগ্রেশন ঠিকমতো কাজ করছে কিনা তা পরীক্ষা করা। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ কারণ একটি ভুল বা অসম্পূর্ণ ইন্টিগ্রেশন আপনার সাইটের কার্যকারিতা ব্যাহত করতে পারে। এই ধাপে প্রতিটি ফিচার ও ফাংশনালিটি আলাদা আলাদাভাবে পরীক্ষা করুন। উদাহরণস্বরূপ, SEO প্লাগইনের ক্ষেত্রে Sitemap এবং Meta Tag সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা দেখতে হবে। সিকিউরিটি প্লাগইনের ক্ষেত্রে firewall এবং malware স্ক্যানিং সঠিকভাবে চালু রয়েছে কিনা তা যাচাই করুন। লাইভ চ্যাট বা কাস্টমার সার্ভিস অ্যাপের ক্ষেত্রে টেস্ট চ্যাট করে দেখুন সেটি সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা।
ধাপ ৫: নিয়মিত আপডেট ও মনিটরিং করুন
ইন্টিগ্রেশন সম্পন্ন হওয়ার পরে আপনার কাজ শেষ হয়ে যায় না, বরং নিয়মিত প্লাগইন এবং অ্যাপগুলোকে আপডেট এবং মনিটরিং করতে হবে। নিয়মিত আপডেট না করলে আপনার ওয়েবসাইট নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে, কারণ প্লাগইনগুলোর পুরোনো ভার্সনে বিভিন্ন ধরনের সিকিউরিটি দুর্বলতা থাকতে পারে। নিয়মিত আপডেট আপনার সাইটকে নিরাপদ এবং অপটিমাইজড রাখবে। এছাড়া প্লাগইন ও অ্যাপের পারফরম্যান্স মনিটরিং করুন, যাতে কোনো সমস্যা থাকলে দ্রুত সমাধান করা যায়। এর ফলে আপনার ওয়েবসাইট সর্বদা অপ্টিমাইজড থাকবে এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাও ভালো হবে।
সাধারণ ভুল যা এড়িয়ে চলা উচিত
প্লাগইন ও অ্যাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেক সময় কিছু সাধারণ ভুল হয়ে থাকে, যেগুলো এড়িয়ে চললে ওয়েবসাইটের পারফরম্যান্স ও নিরাপত্তা উভয়ই নিশ্চিত করা যাবে। সবচেয়ে প্রচলিত ভুলগুলোর একটি হলো অপ্রয়োজনীয় অনেক প্লাগইন বা অ্যাপ ইনস্টল করা। অনেক বেশি প্লাগইন ইনস্টল করলে ওয়েবসাইটের স্পিড উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে, যা ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা নষ্ট করে।
অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভুল হলো নিয়মিত প্লাগইন আপডেট না করা। নিয়মিত আপডেট না করলে প্লাগইনে নিরাপত্তাজনিত দুর্বলতা দেখা দিতে পারে, যা হ্যাকারদের জন্য আপনার ওয়েবসাইটকে সহজ লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে দিতে পারে। এজন্য সবসময় প্রতিটি প্লাগইনকে সর্বশেষ ভার্সনে আপডেট করে রাখুন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অজানা বা কম পরিচিত প্লাগইন ব্যবহার করা। এ ধরনের প্লাগইনে নিরাপত্তা এবং কোডিংয়ের সমস্যা থাকতে পারে, যা আপনার ওয়েবসাইটকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। তাই সর্বদা জনপ্রিয় এবং নির্ভরযোগ্য ডেভেলপারদের প্লাগইন ও অ্যাপ ব্যবহার করুন।